Friday, August 25, 2017

ইসলাম : একটি ধারণা !

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, আমরা তাঁর প্রশংসা করি এবং আমরা তাঁর সাহায্য চাই এবং তাঁর ক্ষমা চাই। আমরা আমাদের নফসের মন্দ থেকে এবং আমাদের কর্মের মন্দ থেকে আল্লাহর আশ্রয় চাই। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহ একমাত্র ইবাদতের যোগ্য এবং মুহাম্মাদ আল্লাহর বান্দা এবং সর্বশেষ রাসূল। আল্লাহ শেষ এবং চূড়ান্ত রাসূল মুহাম্মাদ, তাঁর পরিবার এবং তাঁর অনুসারীদের প্রতি শান্তি ও রহমত বর্ষণ করুন। আমীন!
শুরুতে: সর্বোত্তম উপদেশ হচ্ছে আল্লাহর কিতাব, এবং সর্বোত্তম পথ হচ্ছে মুহাম্মাদের অনুসৃত পথ, এবং দ্বীনের মাঝে নিকৃষ্টতম বস’ হচ্ছে নতুন উদ্ভাবনসমূহ, কারণ দ্বীনে প্রতিটি নব উদ্ভাবন হচ্ছে বিপথগামীতা, প্রতিটি বিপথগামীতা হচ্ছে সরল পথ থেকে বিচ্যুতি, আর প্রতিটি বিচ্যুতির পরিণাম জাহান্নাম।
আমি ‘দি ইকোনমিস্ট’ ম্যাগাজিনের জরিপের বিষয়বস্তু ‘ইসলাম এবং পশ্চিম’ (আগস্ট ৬, ১৯৯৪ সংখ্যা, বড় আকারে সন্নিবেশিত) সম্পর্কে বিশেষভাবে বিবেচনার পর সমালোচনা লিখতে শুরু করেছি, এবং নিঃসন্দেহে আল্লাহ সর্বোত্তম সাহায্যকারী। নোয়াম চমস্কি যাকে “বানানো সম্মতি” বলছেন, ব্রায়ান ব্রিডহ্যামের পক্ষে তার উপর নির্ভর করা সম্ভব। যেক্ষেত্রে একনায়কতন্ত্র লোকের সম্মতি আদায় করতে ও বিরোধিতা ঠেকাতে শক্তি প্রয়োগ করে, সেখানে “গণতন্ত্র” প্রচার মাধ্যমকে বিশেষ বিশ্বব্যবস্থার দৃষ্টিভঙ্গি প্রচার করে সম্মতি তৈরী করতে ব্যবহার করে থাকে। যা কমবেশী শাসকগোষ্ঠীর স্বার্থের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। ছোট, সংক্ষিপ্ত আকারের একটি প্রবন্ধ লিখে সে পার পেয়ে যেতে পারে, কারণ তাকে তার অধিকাংশ বক্তব্যই প্রমাণ করতে হয় না, তাকে শুধু জোড়া দেওয়া, প্রচলিত মামুলি মন্তব্যসমূহের পুনরাবৃত্তি করতে হয়। উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, যখন তিনি আলজেরীয় মুসলিমদের “একদল ইসলামী বিদ্রোহী যারা আপোষহীনতার বৈশিষ্ট্যসূচক, সবচেয়ে নিষ্ঠুর প্রকৃতির মৌলবাদী” হিসাবে বর্ণনা করেন, তাঁকে সেটা প্রমাণ করতে হয় না, কারণ কর্তৃপক্ষ এটা ইতোমধ্যেই নিশ্চিত করেছে যে এটাই সত্য বলে লোকে বিশ্বাস করবে। আসলে বিবৃতিটি মোটেও সত্য নয়। আলজেরীয় মৌলবাদীরা প্রমাণ করেছে যে তারা নির্বাচন করতে এবং ইসলামী শরীয়া পুনঃপ্রতিষ্ঠার শান্তিপূর্ণ উপায় খুঁজে পেতে ইচ্ছুক। সামপ্রতিক ঘটনাবলী, যেমন রোমে “বিদ্রোহী মৌলবাদী”দের অন্তর্ভুক্ত করে বিরোধী গ্রুপগুলির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে-যা ফরাসী সরকার পর্যন্ত সমর্থন করেছে এবং আলজেরীয় সরকার প্রত্যাখ্যান করেছে-এটাই প্রকাশ করছে যে আলজেরীয় সরকারই বরং নিষ্ঠুর মানসিকতার অধিকারী। এ ধরনের স্পষ্ট প্রতীয়মান অসামঞ্জস্য সত্ত্বেও জনাব ব্রিডহ্যাম কোন জবাবদিহিতার সম্মুখীন হন না, কারণ এই ঐকমত্য আগেই তৈরি হয়ে আছে যে মৌলবাদীরাই বিদ্রোহ পরায়ণ ও নিষ্ঠুর মানসিকতার অধিকারী।



একইভাবে তিনি কখনোই অনুভব করেন না যে তাঁকে প্রমাণ করতে হবে যে গণতন্ত্র একটি সুবিধা, এটা প্রায় সম্পূর্ণ স্বতঃসিদ্ধ হিসেবেই ধরে নেওয়া হয়েছে, কারণ তিনি জানেন যে তাঁর শ্রোতাবৃন্দ বলতে গেলে প্রায় “বন্দী”। আওয়াজের হুল-ফোটানোর (হয়তো এক্ষেত্রে শব্দের হুল-ফোটান) এই যুগে, প্রচলিত জ্ঞানের বিরুদ্ধে যাওয়া সহজ নয়, কারণ জনাব ব্রিডহ্যামের মত লোকেরা যা একটি বাক্যে বলেন, তার বিরুদ্ধে কিছু বলতে গেলে সেটি একটি বই হয়ে যাবে। তারপরও তার কার্যকারিতায় সন্দেহ থেকে যাবে, কারণ সমাজের মূল্যবোধের বিরোধিতা করা আমাদের মত স্বভাবগত সামাজিক জীবের জন্য অত্যন্ত কঠিন পথের একটি। এজন্য আমি একগুচ্ছ প্রবন্ধ লিখব, একটি নয়, যাতে আমার সমালোচনাটিকে অনেকগুলি সাজানো-গোছানো খণ্ডে ভাগ করা যায়। কিছু বিষয় আমি পরিশিষ্টেও উল্লেখ করবো, যাতে ভিডিও এবং অডিও টেপও অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

ইসলাম : একটি ধারণা!

নিঃসন্দেহে কোন মুসলিম ইসলামকে কেবলমাত্র একটি ধারণা হিসাবে গ্রহণ করতে পারে না। জরিপে যা উল্লেখিত হয়েছে তা হলো, ইসলামের ভিত্তি হচ্ছে “আল্লাহর বাণী, যা চৌদ্দশত বছর আগে প্রতিটি শব্দাংশে মুহাম্মাদের উপর অবতীর্ণ হয়েছিল” (পৃ. ৪, অ. ২)। অর্থাৎ এটা ধারণামাত্র নয়, বরং এটাই ধারণা, এটাই আদর্শ, এটাই সত্য, অন্য সব কিছু বাদে। কুরআন যেমন বলছে:
“নিঃসন্দেহে আল্লাহর কাছে দ্বীন হচ্ছে ইসলাম” … “এবং যে কেউ ইসলাম ছাড়া অন্য ধর্মকে জীবন বিধান হিসাবে চাইবে, তা কখনও গ্রহণ করা হবে না এবং আখিরাতে সে হবে ক্ষতিগ্রস্তদের দলভুক্ত” (সূরা আলে-ইমরান ৩:৮৫)।
দ্বীনকে সম্পূর্ণ এবং বিশুদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে, এবং পরিবর্তন বা খাপ খাওয়ানোর কোন প্রয়োজনীয়তা নেই: “আজ আমরা তোমাদের দ্বীনকে তোমাদের জন্য সম্পূর্ণ করে দিয়েছি এবং আমাদের অনুগ্রহ তোমাদের উপর পরিপূর্ণ করেছি এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন হিসাবে মনোনীত করেছি।” নবী (সঃ) আরো বলেছেন: “ আমি এমন কোন কিছু জানাতে বাদ রাখিনি যা তোমাদের জান্নাতের নিকটবর্তী করবে ও জাহান্নাম থেকে দূরে সরিয়ে রাখবে, এবং এমন কোন কিছু থেকে সতর্ক করতে বাকী রাখিনি যা তোমাদেরকে জান্নাত থেকে দূরে সরিয়ে রাখবে ও জাহান্নামের নিকটবর্তী করবে।” এটা নিঃসন্দেহে সত্য যে ইসলাম তার অনুসারীদের জীবনের “আভ্যন্তরীণ” ও “বাহ্যিক” বিশ্বাস এবং কর্ম, ধর্ম ও রাজনীতি এসবের মাঝে পার্থক্য করা অনুমোদন করে না, কারণ বাস্তবে এসব পার্থক্য সম্পূর্ণ প্রতারণামূলক। মানুষের বিশ্বাস হচ্ছে তার কর্মের ভিত্তি ও প্রধান চালিকাশক্তি, কারণ যা কিছু অন্তরে সত্যি বলে মনে করা হয়, বাইরে অবশ্যই তার প্রকাশ ঘটে। কার্যতঃ মুহাম্মাদ (সঃ) কে সর্বপ্রথম যে কাজ দেওয়া হয়েছিল, তা হচ্ছে ভুল বিশ্বাসকে সংশোধন করা। মুশরিক আরবরা যে আল্লাহতে, বা সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস করত না তা নয়। বস্তুতঃ কুরআন মুহাম্মাদ (সঃ) কে বলছে:
“তুমি যদি তাদের জিজ্ঞাসা কর আকাশ থেকে কে বৃষ্টি বর্ষণ করে? তারা অবশ্যই বলবে, ‘আল্লাহ!’ বল: ‘সমস্ত প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা আল্লাহরই!’ না! তাদের অধিকাংশেরই কোন চেতনা নেই।” (সূরা আনকাবুত ২৯:৬৩)
“বল: ‘কে তোমাদের আকাশ ও পৃথিবী থেকে জীবনোপকরণ সরবরাহ করে অথবা শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তি কার কর্তৃত্বাধীন? কে মৃত থেকে জীবিতকে নির্গত করে এবং সকল বিষয় নিয়ন্ত্রণ করে?’ তখন তারা বলবে, ‘আল্লাহ!’ বল: ‘তবুও কি তোমরা সাবধান হবে না’?” (সূরা ইউনুস ১০:৩১)
সত্যি বলতে কি মুশরিক আরবরা প্রয়োজন ও কষ্টের সময় আল্লাহর ইবাদত করত, তাঁর কাছে প্রার্থনা করত এবং কুরবানী করত, ইহুদী ও খৃস্টানদের মত, এবং তারা এমনকি আল্লাহকে ভালবাসার দাবীও করতো, কিন্তু তাদের এ সবকিছুই আল্লাহ প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং তাদেরকে নির্বোধ ও বিপথগামী হিসাবে উল্লেখ করেছেন এবং অবিশ্বাসী বলেছেন। অতএব এটাই অধিকাংশ মানুষ ও জ্বিনের বেলায় বাস্তবতা যে তারা দাবী করে যে তারা আল্লাহকে বিশ্বাস করে ও আল্লাহর ইবাদত করে, কিন’ আল্লাহ সম্পর্কে তারা যা বিশ্বাস করে তা অশুদ্ধ, এবং তাদের ইবাদতের পদ্ধতিও সঠিক নয়…
“তাদের অধিকাংশ আল্লাহতে বিশ্বাস করে কিন’ তাঁর শরীক করে” (সূরা ইউনুস ১২:১০৬)
… এবং এর প্রকাশ বিভিন্ন এবং অশুভ ফলাফল অগণিত।
এসব কিছুরই একটি সাধারণ কারণ বা মূল আছে, তা হচ্ছে কোন জ্ঞান ছাড়া আল্লাহ সম্পর্কে চিন্তা করা ও বলা, এভাবে তাঁর প্রতি এমন কিছু আরোপ করা যা তাঁকে আরোপ করা যায় না, যেমন পুত্র অথবা কন্যা, বা মানবীয় গুণ ও দোষসমূহ, বা এমন দাবী করা যে তাঁর কোন সৃষ্টি তাঁর শক্তি ও সামর্থ ধারণ করে, বা এমন কোন কাজে তিনি ক্রুদ্ধ হন বলে মনে করা যা আসলে তাঁকে সন্তুষ্ট করে। সুতরাং এভাবে মূর্তিপূজারীরা এমন কাউকে ডাকে যে তাদের কোন ভাল বা মন্দ কোনটাই করতে পারে না, এবং খৃস্টানরা যীশুকে ডাকে, এবং ইহুদীরা বিশ্বাস করে তাদের জাতিগত শ্রেষ্ঠত্ব তাদেরকে আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য করবে, এবং যারা বিশ্বাস করে যে সাফল্যের উপায় হলো শক্তি, সম্পদ ইত্যাদি ; তারা সকলেই তাদের বিশ্বাস ও আস্থা স্থাপন করেছে অসার জিনিসে – এটা নিজেই একটা বিরাট মন্দ, কারণ তারা শুধু তাদের সময় এবং প্রচেষ্টা বিনষ্ট করেছে, যদিও এটাই সবচেয়ে কম খারাপ পরিণতি। সবচেয়ে যা গুরুতর তা হচ্ছে… যারা আল্লাহর সাথে শিরক করে তাঁর ক্রোধ এবং আযাব অর্জন করেছে, এবং তাদের উপর দুনিয়াতেও লাঞ্ছনা রয়েছে আর আখিরাতে ভয়ঙ্কর পরিণতি
“নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সাথে শিরক করার অপরাধ ক্ষমা করেন না। এছাড়া অন্যান্য অপরাধ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন” (সূরা আন-নিসা ৪:৪৮)।
সুতরাং “শিরক” বা আল্লাহর অংশী স্থাপন করা (তা যেভাবেই হোক না কেন) হচ্ছে ক্ষমার অযোগ্য পাপ, কারণ বাস্তবে এটা সকল অমঙ্গলের মূল, সবচেয়ে বড় অবিচার, নিকৃষ্ট জুলুম এবং কুকাজ। এটা এজন্য যে কেউ যদি আল্লাহ সম্পর্কে না জেনে মন্তব্য করতে দ্বিধা না করে – যে জ্ঞান তাঁর মাধ্যমে ছাড়া অর্জন করা যায় না যেহেতু তিনিই নিজের সম্পর্কে এবং নিজের ইচ্ছা সম্পর্কে এবং কি তাঁকে সন্তুষ্ট বা অসন্তুষ্ট করে, সে সম্পর্কে সবচেয়ে ভাল জানেন – তাহলে অন্য কার সম্পর্কে কেউ মূর্খের মত কথা বলতে ভয় করবে? সত্যিই, যে প্রকৃতির ধ্বংসকারী শক্তি সম্পর্কে সচেতন, এ দুনিয়ায় ও পরকালে যেসব অকথ্য দুর্ভাগ্য ও দুর্দশা মানুষের জন্য রয়েছে যার উপর আল্লাহ ছাড়া আর কারো কোন শক্তি ও নিয়ন্ত্রণ নেই তা বোঝে, তার কাছে এটা স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান যে আল্লাহই হচ্ছেন সবচেয়ে ভয়ঙ্কর এবং ভয়ের যোগ্য। এবং যে কেউ পৃথিবী ও মহাবিশ্বের ভিতরের অলৌকিক শৃঙ্খলা, খুঁটিনাটি ব্যাপারে যথাযথতা ও জীবজগতের পরস্পর নির্ভরশীলতা খেয়াল করে দেখবে, অবশ্যই সে এসবের সৃষ্টিকর্তার অতুলনীয় জ্ঞান ও বিজ্ঞতা অনুধাবন করবে। সুতরাং কেউ যদি আল্লাহর আইন লংঘন করার ব্যাপারে বেপরোয়া হয় এবং সেগুলিকে ক্ষুদ্র বা তুচ্ছ মনে করে অথবা আরো খারাপ ব্যাপার হচ্ছে যদি সেগুলিকে খারাপ, অশুভ এবং বাতিল বলে মনে করে, তাহলে মানুষের সীমাবদ্ধ ধ্যান-ধারণা-উদ্ভূত আইনের বেলায় কি হবে? কেউ যদি তার সৃষ্টিকর্তা ও রিযিকদাতার প্রতি অকৃতজ্ঞ হতে পারে, তাহলে তার কাছে সৃষ্টির প্রতি অকৃতজ্ঞতা কি অত্যন্ত সামান্য ব্যাপার বলে মনে হবে না? আল্লাহর অধিকার ও তাঁর প্রতি কর্তব্যসমূহ, যা সবচেয়ে বেশী পূরণ-যোগ্য, কেউ যদি তা অস্বীকার করে, তাহলে সে আর কোন অধিকার ও দাবী অস্বীকার করতে ভয় করবে? কল্পনা করুন আপনার কোম্পানীর একজন শ্রমিকের কথা, যে আপনাকে মনে করে ঝাড়-দার এবং ঝাড়-দারকে মনে করে কোম্পানীর পরিচালক! সেখানে কি কুফল দেখা দেবে না? আপনি কি এমন লোককে সহ্য করবেন? যদি করেন, কতক্ষণ পর্যন্ত? এখন ভেবে দেখুন এই নির্বোধ অন্যদের বোঝাচ্ছে ও বাধ্য করছে এতে বিশ্বাস করতে, এবং অধিকাংশই আপনার আদেশ ও নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নিজের পছন্দমত নিয়ম তৈরী করছে এবং ঝাড়ুদারকে নিজেদের নেতা মেনে চলছে যে আসলে বধির ও বোবা!



যেসব মন্দ মানুষকে প্রলুব্ধ করে তার আসল কারণ হচ্ছে অবিশ্বাস, পাপপ্রবণতা ও আল্লাহর প্রতি অকৃতজ্ঞতা:
“তোমাদের যে বিপদাপদ ঘটে তা তোমাদেরই কৃতকর্মের ফল এবং তোমাদের অনেক অপরাধ তিনি ক্ষমা করে দেন” (সূরা আশ-শূরা, ৪২:৩০)
“মানুষের কৃতকর্মের দরুন জলেস্থলে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়ে, যার ফলে তাদের কোন কোন কর্মের শাস্তি তাদের আস্বাদন করান হয় যাতে তারা সৎপথে ফিরে আসে” (সূরা আর রুম, ৩০:৪১)
যেমন নবী (সঃ) বলেছেন:
“আল্লাহর চেয়ে বেশী মর্যাদা-বোধ সম্পন্ন (গাইরা: কারো সম্মান বা মর্যাদা আহত হলে বা প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্মুখীন হলে যে প্রচণ্ড রাগ ও ক্রোধের অনুভূতি হয়) কেউ নেই, এবং তাই তিনি লজ্জাজনক কাজ ও পাপকাজ নিষেধ করেছেন। এবং আল্লাহর চেয়ে বেশী প্রশংসা পছন্দকারী কেউ নেই” (সহীহ বুখারী)।
কোন মানুষ তার স্ত্রীকে অন্যের সাথে যিনা করতে দেখলে যত না ক্রুদ্ধ হয়, আল্লাহ তার চেয়েও বেশী ক্রুদ্ধ হন তাঁর বান্দার অবাধ্যতায়। তাহলে যারা তাঁর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বী ও অংশীদার স্থাপন করে তাঁকে অপমান করে, যা থেকে তিনি মুক্ত, তাদের প্রতি তাঁর ক্রোধ কতখানি হতে পারে! এবং এর অশুভ পরিণতি এই জীবনে সীমাবদ্ধ নয়:
“নিশ্চয় যারা অবিশ্বাস করেছে এবং অবিশ্বাসী অবস্থায় মারা গেছে, তাদের পক্ষে পৃথিবী-পূর্ণ স্বর্ণ বিনিময় স্বরূপ প্রদান করলেও কখনো তা কবুল করা হবে না। এ সকল লোকের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি এবং এদের কোন সাহায্যকারীও নেই” (সূরা আলে ইমরান, ৩:৯১)।
নবী (সঃ) ব্যাখ্যা করেছেন:
“বিচার দিবসে একজন অবিশ্বাসীকে জিজ্ঞাসা করা হবে: ‘মনে কর তোমার কাছে পৃথিবী-পূর্ণ স্বর্ণ রয়েছে, তুমি কি তা জাহান্নামের আগুনের বদলে মুক্তিপণ হিসাবে দান করবে?’ সে বলবে: ’হ্যাঁ’। তখন তাকে বলা হবে: ‘তোমাদেরকে এর চেয়েও সহজ কিছু করতে বলা হয়েছিল, তা এই যে তোমরা আল্লাহর ইবাদতে কাউকে শরীক করো না এবং আল্লাহর আনুগত্য কর, কিন্তু তোমরা প্রত্যাখ্যান করেছিলে।” (বুখারী)
নিঃসন্দেহে সকল নবীর বক্তব্য/বাণী ছিল এক ও অভিন্ন:
“আল্লাহর উপাসনা করার ও তাগুতকে (সে সমস্ত সত্তা, যাদেরকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার পাশাপাশি ইলাহ বা প্রভু হিসেবে বিবেচনা করা হয়) বর্জন করার নির্দেশ দেবার জন্য আমি অবশ্যই প্রত্যেক জাতির মধ্যে রাসূল পাঠিয়েছি” (সূরা আন নাহল, ১৬:৩৬)
এবং নিঃসন্দেহে আল্লাহ এজন্যই মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছেন:
“আমার দাসত্বের জন্যই আমি মানুষ ও জ্বিনকে সৃষ্টি করেছি।” (সূরা আয-যারিয়াত, ৫১:৫৬)
সুতরাং “শিরক” (আল্লাহ সাথে অংশী স্থাপন করা) সেই কারণের বিপরীত যেজন্য আল্লাহ আমাদের সৃষ্টি করেছেন, এবং আমাদের অস্তিত্বের উদ্দেশ্যের বিরোধী, যা হচ্ছে আল্লাহকে এককভাবে ইবাদতের জন্য বেছে নেওয়া, সমস্ত মিথ্যা উপাস্যকে ত্যাগ করা, ত্যাগ, দোয়া, আত্মসমর্পণ, অধীনতা, বাধ্যতা ও সম্মতির সাথে এবং ভালবাসা, ভয়, আশা, বিশ্বাস ও আস্থার সাথে সম্পূর্ণভাবে তাঁর ইবাদত করা, শুধুমাত্র তাঁর সন্তুষ্টি কামনা করা-তাঁর সৃষ্টির প্রশংসা কামনা না করা, এবং সবকিছুই তাঁর শেষ ও চূড়ান্ত রাসূল মুহাম্মাদ (সঃ) এঁর উপর যা অবতীর্ণ হয়েছে সেই অনুযায়ী করা, এবং নিজের খেয়াল ও প্রবৃত্তি এবং অনুমানবশতঃ না চলা।
এই আলোচনার সাথে প্রাসঙ্গিকতাপূর্ণ হিসাবে আল্লাহর এই সমস্ত গুণাবলী উল্লেখ করা যায় যা শুধু আল্লাহরই বৈশিষ্ট্য এবং তাঁকে এককত্ব দান করে। যেমন হাকিম-বিচারক, হাকীম-বিজ্ঞ, আলীম-সর্বজ্ঞানী এবং শারঈ-বিধানদাতা। আল্লাহ শুধুমাত্র সৃষ্টিকর্তা, নিয়ন্ত্রণকারী ও পালনকর্তা নন, মানবজাতির বিধান দেওয়ার ব্যাপারে এককভাবে জ্ঞান ও বিজ্ঞানসম্পন্ন এবং ভাল-মন্দ, ভুল-শুদ্ধ, হালাল ও হারামের নির্ধারক এবং কোন আইন অনুসারে আমরা বিচার করব, কোন সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা আমরা গ্রহণ করব সেসবের নির্ণায়ক…
“তিনি কাকেও নিজ কর্তৃত্বের অংশী করেন না” (সূরা আল-কাহফ, ১৮:২৬)… “বিধান দেবার অধিকার কেবল আল্লাহরই” (সূরা ইউসুফ, ১২:৪০)।
আল্লাহ ইহুদী ও খৃস্টানদের সতর্ক করেছেন এবং তাদেরকে অবিশ্বাসী বলেছেন, কারণ
“…তারা আল্লাহ ব্যতীত তাদের পণ্ডিতগণকে এবং সংসার বিরাগীগণকে তাদের প্রতিপালকরূপে গ্রহণ করেছে” (সূরা আত-তাওবা, ৯:৩১)।
নবী (সঃ) বর্ণনা করেছেন যে তাদের পণ্ডিত ও ধর্মযাজকরা “আল্লাহ যা অবৈধ করেছেন তাকে বৈধ বানিয়েছে আর আল্লাহ যা বৈধ করেছেন, তাকে অবৈধ করেছে এবং লোকেরা তা গ্রহণ করেছে…। সুতরাং এটাই হচ্ছে তাদেরকে লোকেদের ইবাদত করা।” সুতরাং মানুষকে কর্তৃত্বের ক্ষমতা দেওয়া পরিষ্কার ও স্পষ্ট প্রতীয়মান অবিশ্বাস এবং শিরক করা বা আল্লাহর সাথে অংশী স্থাপন করা যা ক্ষমার অযোগ্য পাপ এবং সৃষ্টির উদ্দেশ্যের বিপরীত। যদি আল্লাহ ইহুদী ও খৃষ্টানদের দোষারোপ করে থাকেন তাদের কিতাব ও ঐশী বিধানের জ্ঞানে জ্ঞানী লোকদের কাছ থেকে বিধিবিধান গ্রহণের জন্য যারা সেগুলিকে পরিবর্তন ও বিকৃত করেছিল এবং হারামকে হালাল ও হালালকে হারাম করেছিল, আজ পর্যন্ত তারা যা করে চলেছে, তাহলে তাদের বেলায় কি বলা যাবে যারা এসব বিধিবিধান টম, ডিক, হ্যারী যে কারো কাছ থেকে গ্রহণ করে যাদের কোন কিতাব নেই বা কোন প্রজ্ঞা নেই কেবল অনুমান, খেয়ালখুশী এবং প্রবৃত্তির আকাঙ্খা ছাড়া যেমন গণতন্ত্রের ক্ষেত্রে?!?
অতএব, ইকোনমিস্ট ম্যাগাজিনের জরিপটি স্বীকার করছে যে ইসলাম ভিতরে ও বাইরে, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে পার্থক্য করে না, তবু তারা পরামর্শ দিচ্ছে যে মুসলিমরা যেন এটা বর্জন করে, এবং আল্লাহর বিরুদ্ধে নিকৃষ্টতম ভুল, অবাধ্যতা ও বিদ্রোহ করে এবং শিরক করে তাঁর প্রতি ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ করে। আল্লাহ সত্যি বলেন যখন তিনি বলেন:
“ইহুদী ও খৃষ্টানরা তোমার প্রতি কখনো সন্তুষ্ট হবে না যতক্ষণ না তুমি তাদের ধর্মাদর্শ অনুসরণ কর” (সূরা আল-বাকারা, ২:১২০)
এবং আমরা এ থেকে আল্লাহর আশ্রয় চাই, তা না হলে আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হব।